রেসিপির গল্প এবং কেন এই রেসিপিটি বিশেষ?
বাঙালি রান্নায় বাটা বা ভর্তা একটি অতি পরিচিত খাবারের অংশ। সাদামাটা খাবারকে যদি একটু টানটান সুগন্ধ এবং তীব্র মশলার স্বাদে পরিণত করতে চান, তবে কালো জিরা রসুনের ভর্তা নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ আইটেম। মসলা এবং কড়া স্বাদের খাবার যারা পছন্দ করেন, তাদের কাছে এই ভর্তা হতে পারে একটি চমৎকার মজাদার রেসিপি। এর মিষ্টি এবং হালকা তেঁতো গন্ধ মিলিয়ে এক ভিন্নধর্মী স্বাদ সৃষ্টি করে, যা খাবার সময় প্রতিটি কামড়কে অমৃত করে তোলা।
এই রেসিপিটি খুবই সহজ এবং দ্রুত তৈরি করা যায়। পরিবেশন করা যায় সাদা ভাতের সঙ্গে অথবা রুটি বা পরোটা সাথেও।
কেন এটি খেতে ভালো লাগবেঃ
১. কালো জিরা এবং রসুনের সংমিশ্রণে গড়া এই ভর্তার স্বাদটি অন্য যে কোনো খাবারের থেকে একেবারেই আলাদা।
২. স্বাদে টানটান মশলার সংমিশ্রণ, যা আপনার মুখে অসাধারণ অনুভূতি এনে দেবে।
৩. সহজে তৈরি হওয়ার পরেও এটি একেবারেই বিশেষ রেসিপি, যা যে কোনো খাবারের সাথে যোগ করা যায়।
৪. এই খাবারটি সুগন্ধি এবং মজাদার, যা প্রতিটি বাইটে নতুন অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
কি কি থাকা লাগবে রান্নাটা করতেঃ
১. কালো জিরা
২. রসুন
৩. কাঁচা মরিচ
৪. সরিষার তেল
৫. পেঁয়াজ
৬. লবণ
স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
- কালো জিরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
- রসুনে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- এই ভর্তায় ব্যবহৃত উপকরণগুলি আমাদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, তবে সবসময় পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
পরিবেশনঃ
সাধারণত কালো জিরা রসুনের ভর্তা গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এই ভর্তা একেবারে সাদামাটা কিন্তু স্বাদে ভরপুর এবং পুষ্টিকর।
তাহলে আর দেরি কেন? চলুন তৈরি করি এই সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর কালো জিরা রসুনের ভর্তা, যা আপনার প্রতিদিনের খাবারে অসাধারণ স্বাদ এনে দেবে!
সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে কালো জিরা রসুনের ভর্তা রেসিপি
কালো জিরা ও রসুনের ভর্তা একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর বাংলা খাবার, যা শীল পাটায় বেটে তৈরি করা হয়। অল্প সময়ে সাধারণ কয়েকটা উপকরণে তৈরি এই ভর্তা সাদা ভাতের সাথে খুব ভালো যায়। স্বাদ এবং পুষ্টির জন্য এটি একটি দারুণ অপশন।
Ingredients
- ১-৩ কাপ কালোজিরা
- ১৫-২০ টি কাঁচা মরিচ
- ৩ টি রসুন (মাঝারি সাইজ)
- ১ টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুচি
- ১/২ কাপ ধনিয়া পাতা
- ৩ টেবিল চামচ তেল
- ১ চা চামচ লবণ (স্বাদ মতো)
- ১ চা চামচ সরিষার তেল
Instructions
- কালো জিরা ভাজাঃ প্রথমে একটি তাওয়া নিন এবং সেটি হাই হিটে ভালো করে গরম করে নিন। এই সময় অনবড়ত নাড়তে থাকুন এবং খুব অল্প সময়ের মাঝে ধোঁয়া উঠা শুরু হলে সাথে সাথে কালোজিরা নামিয়ে নিন। বেশি ভাজা হয়ে গেলে বা পুড়ে গেলে কালোজিরা তিতা লাগবে খেতে। এই কালো জিরা হলো আমাদের রেসিপির মূল উপকরণ, তাই খুব যত্ন সহকারে ভেজে নিতে হবে।
- অন্যান্য উপকরণ ভাজাঃ এখন একই তাওয়াতে ২ টেবিল চামচ তেল দিন। তেল গরম হয়ে গেলে কাঁচা মরিচ, রসুন কোয়া এবং পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিন। পিয়াজ যখন সোনালী রঙ ধারণ করবে এবং রসুনের গন্ধে যখন মন ভরে উঠবে, তখন সেটি আরও কিছু সময় ভাজতে দিন। আপনি চাইলে ঝাল কম বা বেশি করার জন্য, কিছুটা কম বা বেশি কাঁচা মরিচ ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই ভর্তায় একদম অল্প ঝাল খেতে ভালো লাগবে না।
- ধনিয়া পাতা যোগ করাঃ এখন ধনিয়া পাতা যোগ করুন এবং আরো কিছুক্ষণের জন্য ভাজতে দিন। ধনিয়া পাতার বিশেষ টাটকা ঘ্রাণ, রসুন ও কাঁচা মরিচের সাথে যোগ হয়ে একটি অসাধারণ সুগন্ধ সৃষ্টি করে। এবার এটি নামিয়ে ফেলুন। তেল, পিয়াজ, রসুন, মরিচ এবং ধনিয়া পাতা মিলে ভর্তায় একটি দারুন স্বাদ যোগ করবে।
- বাটা প্রস্তুতিঃ এবার শীল পাটাতে ভাজা কালো জিরা, লবণ এবং ভাজা পিয়াজ, রসুন, ধনিয়া একসাথে যোগ করুন। ভালভাবে বেটে একসাথে মিশিয়ে নিন। পাটাতে বাটা মশলা এবং উপকরণগুলোর সংমিশ্রণের স্বাদ ব্লেন্ড করার চেয়ে একদম আলাদা হয়। বাটা শেষ হলে ভর্তার উপর অল্প সরিষার তেল ছড়িয়ে দিন। যত ভালোভাবে বাটতে পারবেন ভর্তার স্বাদ ততই মজাদার হবে।
- পরিবেশনঃ এই কালো জিরা রসুনের ভর্তাটি সাদা ভাতের সাথে সরিষার তেল ছড়িয়ে পরিবেশন করলে সবচেয়ে ভালো লাগে খেতে।এই ভর্তা বানানো একেবারে সহজ এবং কম সময়ে তৈরি করা যায় কিন্তু খাওয়ার সময় এর স্বাদ এবং ঘ্রাণ একদম মনোমুগ্ধকর।
Notes
অতিরিক্ত টিপসঃ
১. কালো জিরার সাথে আপনি চাইলে কয়েকটা বাদাম যোগ করতে পারেন, স্বাদ এবং টেক্সার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইলে।
২. ভর্তার লবণের পরিমাণ আপনার স্বাদের উপর নির্ভর করে। আপনি যদি বেশি লবণ পছন্দ করেন তবে লবণ পরিমাণ বাড়াতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় প্রথম বার বাটা শেষে মুখে দিয়ে লবন পরীক্ষা করে নেয়া।
৩. আপনি যদি একদম মসৃণ ভর্তা তৈরি করতে চান, তবে পাটাতে বাটার সময় একটু তেল যোগ করতে পারেন। এতে ভর্তা একদম মিশ্রিত হয়ে যাবে এবং মসৃণ texture তৈরি হবে। তবে এক্ষেত্রে খুব বেশি তেল ব্যবহার করবেন না, যেন ভর্তা অতিরিক্ত তৈলাক্ত না হয়ে যায়।
৪. পরিবেশনের সময় ভর্তার উপর কিছু ধনিয়া পাতা ছড়িয়ে নিন। এতে ভর্তাটি দেখতে আরও আকর্ষণীয় হবে।
পরিশেষে, স্বাস্থ্যকর দিক বিবেচনায় এবং স্বাদের দিক থেকে কালোজিরা ভর্তা একটি অসাধারণ মজাদার রেসিপি। উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করলে আরো সুস্বাদু এবং মজাদার ভাবে এই ভর্তা তৈরি করা যায়। যেকোনো সময় এর মধ্যে সামান্য পরিবর্তন এনে নিজের পছন্দের স্বাদে ভর্তাটি সাজাতে পারেন।
কালোজিরা ভর্তা প্রাতঃরাশ, দুপুরের খাবার অথবা রাতের খাবারের জন্য একদম উপযুক্ত।
