রসকরা তৈরির প্রথম ধাপে ঘন ক্ষীর তৈরির জন্য একটি বড় ও ভারী পাত্রে দুধ ঢেলে নেবো। এই ক্ষেত্রে তাজা, ফ্যাটযুক্ত দুধ ব্যবহার করতে পারলে ক্ষীরটা যেমন ভালো হবে, রসকরা খেতে আরও ভালো লাগবে।দুধ ঘন এবং ফ্যাটযুক্ত হলে, ক্ষীর মজাদার এবং মোলায়েম হয় বেশ। স্থানীয় বাজারে পাওয়া খাঁটি গরুর দুধ এই রেসিপির জন্য সবচেয়ে ভালো। এছাড়া, ভারী তলার পাত্র ব্যবহার করলে দুধ সহজে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। এখন মাঝারি আঁচে দুধ ফোটাতে থাকুন। দুধ যখন ফুটতে শুরু করবে, তখন আঁচ কিছুটা কমিয়ে নিতে হবে। দুধ ফুটতে থাকলে, প্রতি ৩-৫ মিনিট পর পর একটি কাঠের চামচ বা স্প্যাচুলা দিয়ে দুধ ভালো করে নেড়ে নিন।
দুধের তলায় জমে থাকা ঘন বা ক্রিমের মতো অংশ উঠিয়ে এনে দুধের সাথে মিশিয়ে নাড়তে থাকুন, যাতে সব অংশ সমানভাবে ফুটতে থাকে। এই নেড়েচেড়ে চলার প্রক্রিয়া দুধকে দানা-দানা না হতে দিয়ে পুরো দুধের সাথে একত্রিত করে মসৃণতা ধরে রাখে।
ধীরে ধীরে, ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে দুধ ফুটানো হলে, খেয়াল করলে বোঝা যায় যে দুধের পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং ঘন হয়ে আসছে। এই সময় ধৈর্য ধরুন এবং দুধের ঘনত্ব পরখ করতে থাকুন। যদি আপনি দেখেন যে দুধ অনেক ঘন হয়ে যাচ্ছে এবং স্বর হয়ে আসছে, তবে বুঝবেন যে দুধ ঠিকভাবে ফুটছে।আর দুধ ফুটানোর এই মধ্যবর্তী সময়টায় নারিকেল কোরানোর কাজটি করতে পারেন। এই ধাপে রসকরা তৈরির জন্য আমরা নারিকেল কোরানোর কাজটি করবো। নারিকেল দুই ভাগ করে ফাটিয়ে নেয়ার পর একটি নারিকেল কোরানি বা গ্রেটারের সাহায্যে নারিকেলটি ভালোভাবে কুরিয়ে নিন।যদি সহজে নারিকেল কুরতে না পারেন, তবে নারিকেল টুকরো করে রেখে মিক্সার বা ব্লেন্ডারেও একসাথে পিষে নিতে পারেন। নারিকেল কুরানোর পর কিছু অতিরিক্ত পানি অনেক সময় বের হয়। সেই পানি একপাশে রেখে দিয়ে কুরানো নারিকেল ভালোভাবে পাত্রে রেখে দিন। তবে একদম ড্রাই করার দরকার নেই, এতে খড়খড়ে হতে পারে রসকরা।
এবার কোরানো শেষ হলে অল্প সময় নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এতে রসকরার টেক্সচার খুব ভালো আসবে।
এবার মূল কাজ, একটি কড়াইতে নারিকেল কোরানো এবং চিনি একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। চিনি মিশানোর সময়, খুব ধীরে ধীরে নারিকেল এবং চিনি একে অপরের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে হাত দিয়ে মিশিয়ে নেয়াই সবচেয়ে ভালো।
নারিকেলে ও চিনি মিশে গেলে চুলা ধরিয়ে খুন্তি বা স্প্যাচুলার সাহায্যে কিছু সময় নাড়তে থাকুন, যতক্ষণ পাক না আসে।
এই সময়ে ক্ষীর প্রায় হয়ে এসেছে। দুধ ঘন হয়ে হালকা বাদামি রঙ ধারণ করবে। সাধারণত ৩০-৪০ মিনিটের মাঝেই দুধ ঘন হয়ে বুদ বুদ অরে ফুটতে শুরু করে। তবে সময় কম- বেশি হয়, দুধের পরিমাণ এবং আঁচের ওপর ভিত্তি করে।এই সময়টায় ধৈর্য নিয়ে অনবরত নাড়তে থাকতে হবে, যেন তলায় লেগে না যায়। এবার চুলার আঁচ বন্ধ করে ক্ষীর হালকা ঠান্ডা হতে দিন এবং এরপর পরবর্তী ধাপের জন্য ব্যবহার করুন।
এখন তৈরিকৃত ক্ষীর পাক আশা নারিকেলের কড়াইতে দিয়ে দিবো। সেই সাথে মিশিয়ে নেবো কয়েক টুকরা এলাচ ও চিনি একত্রে মিশিয়ে গুঁড়ো করা পাউডার।
এবার খুব ভালো করে নেড়ে মিশিয়ে নিলেই রসকরা তৈরির কাজ প্রায় শেষ।
চুলা বন্ধ করে কড়াই নামিয়ে নেবার পর, হাত সহনীয় গরম থাকা অবস্থায় ছোট এক মুঠো পরিমাণ নিয়ে দুই হাতের তালুর মাধ্যমে গোল গোল করে গড়িয়ে নিন। প্রতিটি বল বা রসরা সমান মাপের হলে দেখতে আরও সুন্দর লাগবে। যদি মিশ্রণটি হাতে লেগে যায়, তাহলে হাতে সামান্য ঘি মাখিয়ে নিতে পারেন। এভাবে পুরো মিশ্রণটি দিয়ে মিষ্টিগুলো তৈরি করুন এবং ঠান্ডা হতে দিন। এই সময় সাথে অন্য কেউ কাজে সহযোগীতা করলে বেশ ভালো হবে।কারন, এই ধাপটি দ্রুত শেষ করতে হয়। পাক আসা মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে গেলে বল তৈরি রসকরা ঠিক শেপে বানানো কঠিন হয়ে পরে। এবার একটি একটি করে রসকরা পাত্রে নামিয়ে রাখুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে বয়াম বা অন্য কোনো পাত্রে রেখে দিন। এছাড়া কিছুটা নারিকেল কোরানো উপরে ছড়িয়ে দিয়ে গরম গরম অতি সুস্বাদু এই রসকরা পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করুন।