পাটিসাপটার ইতিহাস ও ঐতিহ্য:
পাটিসাপটা পিঠা বাঙালি খাবারের ঐতিহ্যের অন্যতম একটি নিদর্শন। বিশেষত শীতকালে এই পিঠা আবশ্যিক মিষ্টি খাবার। পিঠা-পুলির মধ্যে পাটিসাপটা এমন এক ধরনের পিঠা যা ছোট থেকে বড় সবাই বেশ পছন্দ করে। সাধারণত এই পিঠা পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি উৎসবে ঘরে ঘরে তৈরি হয়। তাছাড়া, শীতের পুরো মৌসুম জুড়েই চলে এই পিঠা তৈরি এবং খাওয়ার উৎসব। ক্ষীর, খেজুর গুড়, দুধ এবং চালের গুঁড়ার এই অসাধারণ মিশ্রণ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাঙালির ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে আছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা শীতকালের গুড় ও দুধের সহজলভ্যতার জন্যই এই ধরনের পিঠা তৈরি করতেন। এই পিঠাটি কেবল খাওয়ার জন্য নয় বরং এটি পরিবারের সবাইকে একত্রিত করে এবং শীতের সকালে বা সন্ধ্যায় এক কাপ চায়ের সাথে মুহূর্তগুলোকে মধুর করে তোলে। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই ঐতিহ্যবাহী পিঠাকে নতুন রূপে উপস্থাপন করা হলেও, মূল স্বাদটি একই রয়ে গেছে। তাই যারা এখনও পাটিসাপটা পিঠা উপভোগ করেননি, তারা এবার শীতের দিনে খেজুর গুড় আর ক্ষীরের এই ঐতিহ্যবাহী পিঠাটি তৈরি করে দেখুন। এটি শুধু আপনার রসনা তৃপ্তি নয় বরং আপনাকে নিয়ে যাবে অতীতের ঐতিহ্যের এক মধুর যাত্রায়। চলুন পাটিসাপটা পিঠা বানানো শুরু করা যাক-

ক্ষীর পাটিসাপটা পিঠা- শীতের মিষ্টি স্বাদ
খেজুর গুড় ও ক্ষীরের পাটিসাপটা পিঠা বাঙালির শীতের আড্ডায় এক অবিচ্ছেদ্য মিষ্টি সুখ। চালের গুঁড়া ও নরম ময়দার পাতলা পাটির ভেতর ঢেলে দেওয়া হয় খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি দুধের ক্ষীরসা। দুধ ও খেজুর গুড়ের মিশ্রণে তৈরি এই ক্ষীর, এক ভিন্নমাত্রার স্বাদ এনে দেয়। নারিকেল ছাড়াই এই পিঠা সহজে তৈরি করা যায়, আর তাতেই থাকে খেজুরের সুমিষ্ট সুবাস। সকাল, বিকেল বা অতিথি আপ্যায়নে পরিবেশনের জন্য এটি নিখুঁত। শীতের আনন্দে এই পিঠার উষ্ণ স্বাদ আপনার মুহূর্তগুলোকে আরও মনে রাখার মতো করে তুলবে।
Prep Time 30 minutes mins
Cook Time 30 minutes mins
Course Dessert
Cuisine Bengali
Ingredients
- ২ লিটার দুধ
- ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া (যতটা ঘন করবেন/অপশনাল)
- ১ কাপ খেজুর গুড়/ পাটালি গুড় (স্বাদ অনুযায়ী)
- ১.৫ কাপ ময়দা
- ১.৫ কাপ চালের গুঁড়া
- ১ কাপ খেজুর গুড়ের রস (বা গুড়)
- ১.৫ কাপ দুধ (পরিমান মতো)
- ১ টেবিল চামচ সরিষার তেল (প্যান মাখানোর জন্য)
Instructions
- ক্ষীর প্রস্তুতি: প্রথমে ২ লিটার দুধ একটি পাত্রে নিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিতে শুরু করুন। দুধটা কিছুটা ঘন হলে কিছু সময় পর পর নেড়ে দিতে হবে।
- দুধ ঘন হতে কিছুটা চালের গুঁড়া যোগ করলে কাজটি দ্রুত হবে। তবে সময় থাকলে দুধটি স্বাভাবিকভাবে ঘন করে নিতে পারেন।
- যখন দুধ ঘন হয়ে যাবে, পাটালি গুড় কেটে ক্ষীরের মধ্যে যোগ করুন। গুড়ের পরিমান স্বাদ অনুযায়ী যোগ করতে পারেন।
- ধৈর্য ধরে নেড়ে নিয়ে ভালোভাবে গুড়টি মিশিয়ে ক্ষীরটি তৈরি করুন। শেষ দিকে যখন দুধ অনেকটাই ঘন হয়ে আসে, তখন অনবরত নেড়ে দিতে হয়।
- যখন ক্ষীরটি ঠাণ্ডা হবে, এটি একটু জমে যাবে তখন পাটিসাপটার পুরের জন্য এটি একদম পারফেক্ট হবে। এছাড়া ঠান্ড হয়ে জমে যাবার পর ক্ষীর বা ক্ষীরসার ঘনত্বও বাড়বে।
- পাটিসাপটার ব্যাটার প্রস্তুতি: একটি পাত্রে সম পরিমাণ ময়দা, চালের গুঁড়া এবং খেজুর গুড়ের রস (বা গুড়) মিশিয়ে নিন।
- এরপর কিছু সময় ময়ান দিয়ে দুধ যোগ করে ব্যাটার তৈরি করুন। ব্যাটারটি কিছুটা পাতলা হবে, তবে বেশি পাতলা বা ঘন নয়।
- ব্যাটারটিকে ঢেকে কিছুক্ষণ রেস্টে রেখে দিতে হবে।
- পাটিসাপটা তৈরি: একটি ননস্টিক প্যান বা তাওয়ায় সামান্য সরিষার তেল মাখিয়ে নিন।
- ব্যাটার দিয়ে প্যানের মধ্যে রুটির মতো গোলাকার বানিয়ে দিন। গোলাকার এই রুটিকে পাটিসাপটার পাটি বলে ।
- এর ভেতর এখন কিছুটা ক্ষীর পুর দিতে হবে।
- পুর দেয়ার পর রুটির অংশটি সাধারণত তিনটি ভাজ দিলেই পাটিসাপটা পিঠার আকৃতি হয়ে যায়। এবার প্যানে কিছু ছেঁকে নিলে বা একদম অল্প করে ভেজে নিলেই তৈরি অসম্ভব মজাদার ক্ষীরের পাটিসাপটা পিঠা।
- নারিকেল যুক্ত পাটিসাপটা (ঐচ্ছিক): আমরা এখানে নারিকেল ব্যবহার করিনি, তবে আপনি চাইলে ক্ষীরের সাথে নারিকেল মিশিয়ে একটি ভিন্ন স্বাদের পাটিসাপটা তৈরি করতে পারেন। বিস্তারিত রেসিপি পরবর্তীতে দিয়ে দিবো।
Notes
অতিরিক্ত টিপস:
১. ব্যাটার তৈরিতে সতর্কতা: ব্যাটারটি পাতলা হবে, তবে খুব বেশি পানি বা দুধ এক সাথে যোগ না করে, সঠিক ঘনত্বের জন্য দুই বার বা তিন বারে যোগ করুন অল্প অল্প করে।
২. ক্ষীরের ঘনত্ব: দুধের ক্ষীর যদি বেশি ঘন হয়ে যায়, তবে কিছু দুধ যোগ করতে পারেন।
৩. ভাজার সময়: পিঠাটি ভাজার সময় তেল খুব গরম করবেন না, অল্প আঁচে ধীরে ধীরে এবং অল্প সময় নিয়ে ভেজে নিতে হবে।
৪. নারিকেল ব্যবহার: নারিকেল ব্যবহার করলে পিঠার মধ্যে ভিন্ন ধরনের মিষ্টি স্বাদ যুক্ত হবে। যদিও শুধু ক্ষীর আর খেজুর গুড়ের ঘ্রাণেও এটি অতুলনীয়।
৫. পাটিসাপটা পিঠা শুধু খাবার নয়, এটি এক ধরনের পরিবারিক স্মৃতিও। পরিবারের সব সদস্যরা মিলে তৈরি করার সময় বেশ দারুন একটি আড্ডা মুখর সময় কাটাতে পারবেন।
পাটিসাপটা পরিবেশন:
এই পিঠাটি পরিবেশন করতেও রয়েছে নানা কৌশল। ১. গরম গরম পরিবেশন: পাটিসাপটা সবচেয়ে ভালো লাগে গরম অবস্থায়। তাজা ক্ষীরের মিষ্টতা ও খেজুর গুড়ের সুগন্ধ তখন সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হয়। ২. ডেজার্ট হিসেবে পরিবেশন: খাবারের পরে মিষ্টি হিসেবে পাটিসাপটা পরিবেশন করতে পারেন। সুন্দর একটি প্লেটে সাজিয়ে উপরে সামান্য ঘন দুধ বা ক্ষীর ঢেলে দিলে পাটিসাপটা পিঠাকে আরও আকর্ষণীয় করতে পারেন। ৩. অতিথি আপ্যায়ন: অতিথি আপ্যায়নের জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প। চাইলে পিঠার ওপর গুঁড়ো চিনি বা সামান্য কনডেন্সড মিল্ক অথবা খেজুর গুড়ের রস ঢেলে পরিবেশন করতে পারেন। ৪. দুধ পাটিসাপটাঃ খেজুর গুড় দিয়ে দুধ জ্বাল করে পাটিসাপটা পিঠা ভিজিয়েও পরিবেশন করতে পারেন। দুধ পুলির মতো দুধ পাটিসাপটাও তৈরি গেলো! পরিশেষে, পাটিসাপটা পিঠা শুধু একটি রেসিপি নয়, এটি আমাদের জীবনের অংশ। এই পিঠাটি শুধু পেট ভরায় না বরং শৈশবের মিষ্টি স্মৃতি, পরিবারের উষ্ণতা এবং ঐতিহ্যের গল্প মনে করিয়ে দেয়।
তাই, এই শীতে একবার পাটিসাপটা তৈরি করে দেখুন এবং প্রিয়জনদের সাথে এর স্বাদ উপভোগ করুন। যদি আপনি এই রেসিপিটি তৈরি করেন, আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আপনার মতামত আমাদের জন্য অমূল্য। খাবার উপভোগ করুন, স্মৃতি তৈরি করুন!
এই পিঠাটি পরিবেশন করতেও রয়েছে নানা কৌশল। ১. গরম গরম পরিবেশন: পাটিসাপটা সবচেয়ে ভালো লাগে গরম অবস্থায়। তাজা ক্ষীরের মিষ্টতা ও খেজুর গুড়ের সুগন্ধ তখন সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হয়। ২. ডেজার্ট হিসেবে পরিবেশন: খাবারের পরে মিষ্টি হিসেবে পাটিসাপটা পরিবেশন করতে পারেন। সুন্দর একটি প্লেটে সাজিয়ে উপরে সামান্য ঘন দুধ বা ক্ষীর ঢেলে দিলে পাটিসাপটা পিঠাকে আরও আকর্ষণীয় করতে পারেন। ৩. অতিথি আপ্যায়ন: অতিথি আপ্যায়নের জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প। চাইলে পিঠার ওপর গুঁড়ো চিনি বা সামান্য কনডেন্সড মিল্ক অথবা খেজুর গুড়ের রস ঢেলে পরিবেশন করতে পারেন। ৪. দুধ পাটিসাপটাঃ খেজুর গুড় দিয়ে দুধ জ্বাল করে পাটিসাপটা পিঠা ভিজিয়েও পরিবেশন করতে পারেন। দুধ পুলির মতো দুধ পাটিসাপটাও তৈরি গেলো! পরিশেষে, পাটিসাপটা পিঠা শুধু একটি রেসিপি নয়, এটি আমাদের জীবনের অংশ। এই পিঠাটি শুধু পেট ভরায় না বরং শৈশবের মিষ্টি স্মৃতি, পরিবারের উষ্ণতা এবং ঐতিহ্যের গল্প মনে করিয়ে দেয়।
তাই, এই শীতে একবার পাটিসাপটা তৈরি করে দেখুন এবং প্রিয়জনদের সাথে এর স্বাদ উপভোগ করুন। যদি আপনি এই রেসিপিটি তৈরি করেন, আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আপনার মতামত আমাদের জন্য অমূল্য। খাবার উপভোগ করুন, স্মৃতি তৈরি করুন!
Keyword Bengali cuisine, Pitha Puli, Patisapta, Dessert, Bengali Traditional Dessert